ডিসেম্বরে চালু হবে ‘টাকা পে’ কার্ড

Social Share Buttons

আন্তর্জাতিক কার্ডের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয়ে চলতি বছরে জাতীয় পে কার্ড চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ডিসেম্বরে এই কার্ড চালু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।

এর আগে, গত ১৮ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার প্রথমবারের মতো ‘টাকা পে’ কার্ড চালুর ইঙ্গিত দেন। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২টি কমিটি সম্প্রতি ‘টাকা পে’ কার্ড চালুর জন্য কাজ শুরু করেছে।

প্রাথমিকভাবে সেপ্টেম্বরের মধ্যে কার্ডটি চালুর পরিকল্পনা ছিল। পরে গভর্নর জানান, ডিসেম্বরে এটি চালু করা হবে।

২ কমিটির মধ্যে স্টিয়ারিং কমিটির নেতৃত্বে আছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সায়েদুর রহমান এবং ওয়ার্কিং কমিটির নেতৃত্বে আছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের পরিচালক মো. মোতাসেম বিল্লাহ।

কমিটিতে ৮টি স্থানীয় ব্যাংক- ব্র্যাক ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রতিনিধি আছেন। টাকা পে কার্ড প্রস্তুত করতে প্যারিসভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফিমকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও, গত মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দপ্তরে ফিম ও ৮ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ৩ দিনের একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

স্টিয়ারিং কমিটির একজন সদস্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ৮টি ব্যাংক পাইলটভিত্তিতে এই কার্ড ইস্যু করবে। তবে, অন্যান্য ব্যাংকও ইস্যু করতে পারবে।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য একটি কার্ড চালু করবে, পরে টাকা-রুপি কার্ড চালু করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘কার্ড চালুর বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। মূল কথা হলো এটি আমাদের নিজস্ব কার্ড হবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশের মাধ্যমে এই কার্ডের লেনদেন হবে।

শিল্প সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, বাংলাদেশে ভিসা, মাস্টারকার্ড, অ্যামেক্স, জেসিবি, ডিসকভার ও ইউনিয়নপের মতো আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেমের ইস্যু করা কার্ডের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় বাড়ছে। তাই জাতীয় কার্ড চালু করা গেলে খরচ কমবে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, জাতীয় কার্ডটি হবে ভারতের বহুজাতিক আর্থিক সেবা প্ল্যাটফর্ম রুপে’র মতো।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি এই কার্ড চালু করতে পারি, তাহলে গ্রাহকদের লেনদেনের চার্জ ও ফি কমবে। আবার নিরাপত্তা একটি বড় বিষয়। যখন একটি কার্ড আন্তর্জাতিক পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে, তখন নিরাপত্তার বিষয়টিও আমরা নিশ্চিত করতে পারব।’

এই অঞ্চলের দেশগুলো ইতোমধ্যে জাতীয় কার্ড চালু করেছে। ভারতের রুপে ছাড়াও পাকিস্তান পাকপে, শ্রীলঙ্কা লঙ্কাপে এবং সৌদি আরব মাদা কার্ড চালু করেছে।

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হুসাইন বলেন, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম কার্ড অপরিহার্য।

তিনি বলেন, ‘এখন লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মগুলোতে ফি ও চার্জ দিতে হয়। ফলে, বিদেশি মুদ্রার বড় একটি অংশ তাদের কাছে চলে যায়। আমরা যদি কার্ড চালু করতে পারি, তাহলে বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৩ কোটি ১৭ লাখ, ২২ লাখ ১৬ হাজার এবং ৪০ লাখ ৩৭ হাজার।

গত মাসে ডেবিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ৩৯ হাজার ১৪ কোটি টাকা, ক্রেডিট কার্ডে ২ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা এবং প্রিপেইড কার্ডে লেনদেন হয়েছে ৩৫৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *