ডিসি পরিবর্তন কেন? ব্যাখ্যা দিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন

Social Share Buttons

সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনে যাতে ভূমিকা রাখতে পারে, সেটাও ডিসি রদবদলের কারণ, জানালেন ফরহাদ হোসেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এক যোগে প্রায় অর্ধেক জেলায় ডিসি পরিবর্তনের কারণ দেখিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, সামনে আরও ‘কঠিন’ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না, এমন কর্মকর্তাদের মাঠ প্রশাসন থেকে তুলে আনা হয়েছে।

সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে রোববার বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সংলাপে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ডিসি রদবদলের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ নিয়ে এই ব্যাখ্যা দেন তিনি।

দু’একজন জেলা প্রশাসকের কাজ সরকারকে বিব্রত করেছে বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, তবে সেই কারণে কাকে কাকে তুলে আনা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।

সম্প্রতি তিন দফায় ২৮ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়েছে সরকার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন বলে ভোটের সময় মাঠ পর্যায়ে তাদের থাকবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসন গুছিয়ে নিচ্ছে বলে বিরোধী দল অভিযোগ করে আসছে।

তার জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলে আসছিলেন, এটা ‘রুটিন ওয়ার্ক। তবে রোববারের সংলাপে ‘রুটিন ওয়ার্ক’র বাইরেও কিছু কারণ বেরিয়ে এল।

যাচাই-বাছাই করেই ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয় জানিয়ে ফরহাদ বলেন, “বিভিন্ন কারণে দু’একজন ফেইল করে, এদের সংখ্যা কিন্তু কম। তারা ওখানে (ডিসি) গিয়ে অ্যাডজাস্টকরতে পারছেন না। অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে, যেটা আমাদের অনেক সময় বিব্রতও করে।

“সেসমস্ত ক্ষেত্রে আমরা তুলে নিয়েছি, যাতে করে আরও ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশেনের তারা নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং আরও বাড়তে পারে।”

এর সঙ্গে নির্বাচনের যোগসূত্র থাকার কথাও প্রতিমন্ত্রীর কথায় প্রকাশ পায়।

“আমরা চেয়েছি যাতে করে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনে যাতে করে আমাদের কর্মকর্তারা চমৎকারভাবে কাজ করতে পারে এবং একই সাথে কিন্তু আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে চালিয়ে নিতে পারে।”

ডিসি নিয়োগে বৈষম্য ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নিয়ে এক প্রশ্নে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কিছু কর্মকর্তাকে ডিসি হিসেবে পদায়নের পর তুলে নেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মাঠ প্রশাসন দেখে, তারা বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে। একটি মানুষকে যখন ডেস্কে কাজ করতে দেখেন, তার এক ধরনের পারফরমেন্স থাকে। মাঠের কাজের ধরন কিন্তু ভিন্ন রকম।

“যাদের তুলে নেওয়া হয়েছে তাদের ২০ জন ছিল ২২ ব্যাচের। আশা করছি, এ মাসের মধ্যেই তারা যুগ্মসচিব হয়ে যাবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে কিছু অভিযোগ ছিল, জনমনে বেশকিছু অস্বস্তি আছে, সেজন্য আমরা তুলে নিয়েছি। দু’একজনকে তুলেছি, মনে হয়েছে তারা ডেস্কে যেভাবে কাজ করেছে, ওখানে গিয়ে সেভাবে পারছে না।”

ডিসি রদবদলের ক্ষেত্রে ‘নিয়মের বাইরে, আইনের বাইরে, বিধিবিধানের বাইরে’ কিছু করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

ফরহাদ বলেন, “এখন আমরা রাইট ম্যানকে রাইট প্লেসে দেওয়ার চেষ্টা করছি, যাতে করে স্মুথলি সরকারের ভাবমুর্তি, প্রশাসন আমরা বজায় রাখতে পারি, সেটিই আমাদের মূল লক্ষ্য।

“প্রশাসনের ভাবমূর্তি প্রতিনিয়তই উন্নত হচ্ছে, ভালো হচ্ছে, এই ভাবমুর্তি উন্নয়ন হওয়ার গতিধারা সেটা যেন ঠিক থাকে সেজন্য আমরা এই কাজগুলো করে থাকি।”

এই নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই দাবি করে ফরহাদ বলেন, “যারা ডিসি হচ্ছেন তাদের নিয়োগ হয়ত অন্য সরকারের সময় হয়েছে। যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের কতটুকু প্রশিক্ষিত করেছি, সেটা অনুযায়ী তাদের পদায়ন করে থাকি। সেজন্য একথা বলার কোনো স্কোপ নেই, কারণ রাতারাতি কেউ ডিসি হয় না। আমি চাইলেই পলিটিক্যাল কাউকে ডিসি করতে পারব না।”

ডিসি নিয়োগের তালিকায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পিএসদের থাকা নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পিএস নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বেছে বেছে সেরা অফিসারদের সেখানে দেওয়া হয়েছিল। ভালো কর্মকর্তাদের ডিসি করা হচ্ছে। এখানে কোনো পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *