বিএনপি আরেকবার ক্ষমতায় গেলে দেশটা গিলে খাবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রোববার (২৩ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আবারও হাওয়া ভবন করবে। সুযোগ পেলে বাংলাদেশকে গিলে খাবে। এই দলের কাছে গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ, আইনের শাসন, দেশের নিরাপত্তা, নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা নিরাপদ নয়। বিএনপি মানে ভোট চুরি, ভোট জালিয়াতি। বিএনপি মানে ভুয়া ভোটার তালিকা। বিএনপি নালিশ পার্টি। ক্ষমতার জন্য পাগল হয়ে গেছে, বেপরোয়া হয়ে গেছে। তাদের লক্ষ্য একটাই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করা।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি বিদেশিদের কাছে নালিশ করছে। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। ইউরোপ-আমেরিকা এসেছে। বিএনপি ভেবেছে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এই সরকারকে বিদায় দিবে। পাইলেন কি ঘোড়ার ডিম! এখন বিএনপি নেতাদের মুখ শুকিয়ে গেছে। নেতারা মুখে বলে না, পত্রিকায় গালিগালাজ করে। নোয়াখালীতে বিএনপির নেতারা এসে প্রধানমন্ত্রী এবং আমাকে গালিগালাজ করেছে। ফখরুল নিজে এবং তার নেতারাও গালিগালাজ করেছে। একজন শিক্ষক হয়ে ফখরুলের মুখ দিয়ে এত নোংরা কথা কেমন করে বের হয়?
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি বুঝতে পেরেছে ভোট হলে আবারও আওয়ামী লীগ জিতবে। বাংলাদেশের ৭০ পার্সেন্ট লোক শেখ হাসিনাকে ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। আমি যা বললাম সেটা দিনক্ষণ লিখে রাখুন। শেখ হাসিনা করেছেন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল। দেখলে বিএনপি নেতাদের বুকের জ্বালা বাড়ে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি এখন খাই খাই পার্টি। ক্ষুধার জ্বালায় মরে। ক্ষমতার ক্ষুধা, সাংঘাতিক ক্ষুধা। অনেক দিন ক্ষমতায় নেই। ক্ষুধায় অস্থির হয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলামকে মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসলে আওয়ামী লীগ নাকি ১০টা আসনও পাবে না। ২০০৮ সালে এই ফখরুল আর তার নেত্রী আওয়ামী লীগকে মাত্র ৩০টি আসন দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনে দেখা গেল ৩০টি আসন বিএনপি পেয়েছে। তারা যেটা আওয়ামী লীগকে দিতে চেয়েছে আল্লাহর হুকুম সেই ৩০টা তাদের ভাগ্যে জুটেছে। এবার যে কী হবে জানি না। এবার তারা আরও বেপরোয়া-বেসামাল। ফখরুল লন্ডনের হুকুমে চলে। যে দণ্ডিত আসামি অর্থপাচার করে। মুচলেকা দিয়ে পালিয়ে গেছে। যে দলের নেতা দণ্ডিত আসামি সেই দলকে এই দেশের মানুষ সমর্থন করতে পারে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মরে গেছে। এটাকে আর জীবিত করে লাভ নেই। দুনিয়ার সব দেশে তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া ইলেকশন হয়। বাংলাদেশে কেন ইউরোপ-আমেরিকার নেতারা আসে? আমি জিজ্ঞাসা করি আপনাদের কোন দেশে তত্ত্বাবধায়কে ভোট হয়েছে। ইউরোপ বলতে পারেনি, আমেরিকাও পারেনি। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য ভোট করবো। এ প্রতিশ্রুতি আমি দিতে পারি। গণতান্ত্রিক বিশ্বকে বলব পর্যবেক্ষক দিয়ে এই ভোট পর্যবেক্ষণ করুন।
২৭ জুলাই ঢাকাতে বিএনপির মহাসমাবেশ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ নিয়ে আমাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। অক্টোবর মাসে নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি জাতীয় উন্নয়ন শোভাযাত্রা।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কাদের মির্জা বলেন, কোম্পানীগঞ্জের মানুষের একটাই দাবি ছিল নদীভাঙন রোধ করা। ৫৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রসড্যাম প্রকল্পটি পাস করা হয়েছে। আমাদের আর কোনো দুঃখ নেই। আমাদের কোম্পানীগঞ্জে এমন কোনো কাজ বাদ নেই যেটা ওবায়দুল কাদের সাহেব করেননি। ওবায়দুল কাদের সাহেবের প্রশ্নে আমাদের কোনো আপস নেই। এছাড়া কোম্পানীগঞ্জে যত উন্নয়ন হয়েছে সব অবদান শেখ হাসিনার সরকারের এবং আমাদের গর্বের ধন ওবায়দুল কাদেরের। আগামী নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরকে জয়যুক্ত করতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রশ্নে কোনো আপস নেই।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের সঞ্চালনায় শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খাইরুল আনম চৌধুরী সেলিম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, বসুরহাট পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তাশিক মির্জা কাদের, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে বসুরহাট পৌরসভা আলোকিত করার লক্ষ্য নিয়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত ৫৩৫টি সোলার বাতি স্থাপন ও বাসস্ট্যান্ডকে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিকায়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন ওবায়দুল কাদের।