বিধিবহির্ভূতভাবে ৯ আসামিকে জামিন দেয়ার ঘটনায় কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলের নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে করা আবেদন গ্রহণ করেননি হাইকোর্ট। আদালত জানিয়েছেন, ওই বিচারকের লিখিত ব্যাখ্যা যথাযথ হয়নি।
বুধবার (১৯ জুলাই) বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ মোহাম্মদ ইসমাঈলের আবেদন নাকচ করে দেন। পরে এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) দিন ধার্য করেন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজের পক্ষে শুনানি করেন সাঈদ আহমেদ রাজা ও আব্দুন নূর দুলাল। অন্যক্ষে ছিলেন এ বি এম আলতাফ হোসেন ও এস এম আমজাদুল হক।
বুধবার শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, আসামিরা হাজতে যাওয়ার পর তাদের পক্ষে নিয়ম মেনে ওকালতনামা নিয়ে জামিনের আবেদন করলে এবং জামিন দিলে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটত না। আর দায়রা জজকেও হাইকোর্টে ডাকতে হতো না।
প্রসঙ্গত, গত ২১ মে কক্সবাজারের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে জামিন আবেদন নাকচ হয় ৯ আসামির। একই দিন বিধিবহির্ভূতভাবে ওই আসামিদের জামিন দেন জেলা ও দায়রা জজ।
ঘটনার বিবরণে বলা হয়, জমি দখল নিয়ে বিরোধের জেরে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি দেখানো ও আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ভুট্টোসহ নয়জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম রিনা।
গত ১১ এপ্রিল এই মামলায় আসামিরা হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইলে তাদের ছয় সপ্তাহের জামিন দিয়ে কক্সবাজারের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।
গত ২১ মে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে বিচারিক হাকিম আদালতে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
একইদিন আসামিরা কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন এবং তাদের আবেদন মঞ্জুর হয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন চেয়ারম্যান রিনা। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ও দায়রা জজকে তলব করেন হাইকোর্ট।
হাকিম আদালতের মামলার বরাতে হাইকোর্টে দরখাস্তকারীর আইনজীবী বলেন, ২১ মে দুপুর ১২টার দিকে ৯ আসামি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত তাদের আবেদন নাকচ করেন। এদিকে মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের আদেশের কপি পাননি – উল্লেখ করে সকাল ১০টার দিকে আদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জামিনের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হলফনামাসহ আবেদন করেন।
তখন বিচারিক হাকিম আদালতের জামিন আবেদন নাকচের আদেশ ও অন্যান্য কাগজপত্র দায়রা জজ আদালতে দাখিল করা হয়নি। আসামিদের হাজতবাসের মেয়াদসহ সার্বিক বিবেচনায় তাদের জামিন মঞ্জুর করা হয় বলে আদেশে উল্লেখ করেছেন জেলা দায়রা জজ। কিন্তু ৯ আসামিকে হাজতেই নেয়া হয়নি বলে জানান এই আইনজীবী।
আসামিদের কীভাবে জামিন দিয়েছেন, তা ব্যাখ্যা করতে জেলা ও দায়রা জজকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশে মামলার যাবতীয় নথিও আনতে বলা হয়।