রাজধানীতে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপি, যুবলীগ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশ। এ ব্যাপারে বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সমাবেশগুলোকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজধানীজুড়ে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক গোয়েন্দা ছাড়াও র্যাব সদস্যরাও মাঠে থাকবেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ১১ থেকে ১২টি স্থানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমাবেশের ডাক দিয়েছে। যদিও বিকেল ৫টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো দলকেই সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। নিরাপত্তা ব্যবস্থার কৌশল নির্ধারণে আজ দিনভর কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
নির্বাচনের ঠিক পাঁচ মাস আগে রাজধানীতে একাধিক দল একযোগে সমাবেশ কর্মসূচি ডাকায় নাশকতা ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছে ডিএমপি। যারা নাশকতার চেষ্টা বা বিশৃঙ্খলা করবে তাদের খুঁজে বের করে কঠোরভাবে আইনের আওতায় নিয়ে আসার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচন আসলে নাশকতা, আগুন সন্ত্রাস, তাণ্ডব, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডসহ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চলে। সার্বিক পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসব মোকাবিলা করতে হবে। আবার সভা-সমাবেশ করা যেহেতু রাজনৈতিক দলের অধিকার তাই তাদের অনুমতি দিতে হবে।
তারা বলছেন, অনুমতি দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার গুরু দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এমনটা বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সমাবেশ ঘিরে নাশকতার শঙ্কা
আগামীকাল অন্তত ১২টি স্থানে সমাবেশ করবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এ নিয়ে নাশকতার কোনো শঙ্কা রয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামীকাল ওয়ার্কিং ডে। তাছাড়া সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস।
এমন দিনে এতগুলো রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। কোন কোন দল সমাবেশের অনুমতি পাবে সেটা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত (বুধবার বিকেল ৫টা) কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এত দলের কর্মসূচি একইদিনে, নাশকতার শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। নানা ধরনের লোকজন আসবে। কারণ আমাদের অতীতের ইতিহাস তো ভালো নয়।
পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ডিএমপির, নাশকতা-বিশৃঙ্খলা করলে খুঁজে বের করা হবে
ডিএমপির একাধিক গোয়েন্দা ও ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামীকাল মূল নজর থাকবে তিনটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশে। দল তিনটি হলো- বিএনপি, যুবলীগ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। অন্তত ৩০ হাজার পুলিশ সদস্য কাল একযোগে বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন থাকবেন। বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সার্ভিলেন্স বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবেন বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনী ও সংস্থার সদস্যরা। প্রস্তুত রাখা হবে বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় ব্যবহৃত ডিএমপির জলকামান, সাঁজোয়া যান, র্যাকার গাড়ি। চেক পোস্টগুলোয় সক্রিয় তল্লাশি ও নজরদারি থাকবে। যানজট তৈরি হবেই, তা ধরে নিয়ে বিকল্প রুটগুলো সচল রাখার আগাম প্রস্তুতি রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের প্রস্তুতি আছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক জনবল থাকবে। যারা নাশকতার চেষ্টা বা বিশৃঙ্খলা করবে তাদের খুঁজে বের করে কঠোরভাবে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে মিটিং-মিছিল করার অধিকার রাজনৈতিক দলগুলোর আছে। আমরা সবসময় দেখে আসছি, জাতীয় নির্বাচন আসলেই রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি বেড়ে যায়। এবার একাধিক বিরোধী দল ও ক্ষমতাসীন দল পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিচ্ছে। কাজেই নিরাপত্তার বিষয়টি এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আগাম গোয়েন্দা তথ্য রাখতে হবে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে যদি মনে হয় এখানে বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা আছে তাহলে পুলিশ সিদ্ধান্ত নিতে পারে, রাজনৈতিক কর্মসূচি কাল হবে কি না। এখন পর্যন্ত আমার মনে হচ্ছে সবকিছু ভালোই যাচ্ছে। তবে সামনের দিন কেমন যাবে তা স্পষ্ট নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণের ওপর নির্ভর করবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে নাকি উত্তপ্ত হবে।
ওয়ার্কিং ডেতে রাজধানীতে এতগুলো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে নিরাপত্তা দেওয়া ডিএমপির পক্ষে সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, পুলিশ যদি মনে করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে, তবে সমাবেশ করতে দেবে। যদি গোলমাল করার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তো বেসামাল হবে। কারণ আমরা তো দেশ অচল করে দেওয়ার কথাবার্তাও শুনছি বিরোধী শিবির থেকে। যদি পুলিশ মনে করে বেসামাল হবে বা বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা রয়েছে তাহলে শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে পারে।
বিশৃঙ্খলা না হলেও যানজট হবে, জামায়াতকে নিয়ে ভয় আছে
সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক কালকের সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ যদি উসকানি না দেয় তাহলে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা দেখছি না। বিএনপিও বলছে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। উভয় দলই যদি সচেতন থেকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করে ও নির্দেশনা দেয় নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকার তাহলে তো বিশৃঙ্খলা হবে না। তবে কাল বিশৃঙ্খলা না হলেও ঢাকা অচল হবে। ভয়াবহ যানজট হবে। যান চলাচল পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না। তাই নগরবাসীর ভোগান্তি হবে ভয়াবহ। আমার পরামর্শ, রাজনৈতিক কর্মসূচি ছুটির দিনে করা হোক। জনভোগান্তি লাঘবের বিষয়টি রাজনীতিতে থাকুক। কাল জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নগরবাসীকে যানবাহনসহ সড়কে না নামার অনুরোধ করছি।