আল-জাজিরার প্রতিবেদন বাংলাদেশে ‘মহামারির’ পর্যায়ে ডেঙ্গু, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী ডেঙ্গু। প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এরই মধ্যে মহামারি পর্যায়ে চলে গেছে ডেঙ্গুর বিস্তার। অবশ্য সরকার এখনো সেই ঘোষণা দেয়নি।
স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) হিসাব মতে, রোববার (২৩ জুলাই) রাত পর্যন্ত দেশজুড়ে অন্তত ১৭৬ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। এদের মধ্যে ৩১ জনের বয়স ১৪ বছরের কম। ডেঙ্গুতে প্রাণহানির ক্ষেত্রে গত বুধবার ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর দিন। ওই একদিনে ১৯ জন মানুষ মশাবাহিত এই রোগে মারা যান। এ বছর প্রায় ৩৩ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন।
সোমবার (২৪ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ০.৫৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত বছরও এর হার ছিল ০.৪৫ শতাংশ, যেসময় ডেঙ্গুতে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
ডিজিএইচএস বলছে, এ বছরের ১৭৬ মৃত্যুর মধ্যে ১১৫টিই ঘটেছে জুলাইয়ের প্রথম ২৩ দিনে। গত বছর একই সময়ে মারা গিয়েছিল মাত্র ২৯ জন।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, আগামী দিনে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কারণ বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু সাধারণত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।
চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এএনএম নুরুজ্জামান আল-জাজিরাকে বলেন, আমার মনে হয়, এ বছর মানুষের ওপর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ২০১৯ সালের চেয়ে যদি বেশি না হয়, তাহলে অন্তত একই পরিমাণ প্রভাব ফেলেছে।
২০১৯ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। সে বছর মারা যান ১৭৯ জন। আজও অনেকেই ২০১৯ সালকে ‘ডেঙ্গুর বছর’ বলে থাকেন।
এএনএম নুরুজ্জামান বলেন, সরকারের উচিত [এ বছর] ডেঙ্গুকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করা এবং বিস্তার রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। অন্যথায়, পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবকে ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণা করতে গত ১৬ জুলাই সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশের চিকিত্সকদের সর্বোচ্চ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনও।
তবে ডিজিএইচএস মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম মনে করেন, এ বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গুকে মহামারি ঘোষণা করার সময় এখনো আসেনি।
তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ডেঙ্গুকে মহামারি ঘোষণার জন্য আমাদের আরও কিছু মানদণ্ডকে ন্যায্যতা দিতে হবে। আমি মনে করি না, আমরা এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছেছি। তাছাড়া, এটিকে মহামারি ঘোষণা করে মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করার কোনো মানে নেই।