ইসলামী ব্যাংকের কোনো শাখা ঋণ অনুমোদন করতে পারবে না। প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনে এখন দেওয়া হবে আমদানি ঋণপত্র বা এলসির সব ঋণ। ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারবেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। এর বেশি অঙ্কের ঋণের প্রস্তাব পাঠাতে হবে পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটিতে। আর যেকোনো অঙ্কের আমদানি ঋণপত্র বা এলসির জন্য প্রধান কার্যালয়থেকে অনুমতি নিতে হবে।
তবে ইসলামী ব্যাংক বলছে, আসন্ন নির্বাচনে ব্যাংকের অর্থ যাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনেছে। এছাড়া ব্যাংকের জোন ও শাখা পর্যায় থেকে ঋণ (বিনিয়োগ) বিতরণ বন্ধ করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের প্রেক্ষিতে ব্যাংকটি এমন ব্যাখ্যা দিয়েছে, যা তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়, ব্যাংকের জোন ও শাখা পর্যায় থেকে ঋণ (বিনিয়োগ) বিতরণ যথারীতি চলমান রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে ইসলামী ব্যাংক। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত অর্থ যাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
এরই অংশ হিসেবে বিনিয়োগ (ঋণ) বিতরণের ক্ষেত্রে তহবিল ব্যবস্থাপনায় পেশাদারিত্ব বাড়ানো ও গ্রাহকদের আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত করাকে সবচেয়ে প্রাধান্য দিচ্ছি। অগ্রাধিকার খাত বিবেচনা করে আরও স্বচ্ছতার সঙ্গে খাদ্যসামগ্রী, জ্বালানি, সার ও ভোগ্যপণ্যে বিনিয়োগ বিতরণ নিশ্চিত করার জন্য প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে শক্তিশালী করা হয়েছে।’
ইসলামী ব্যাংক জানায়, আমানত ও বিনিয়োগের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সময়োপযোগী নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিবর্তন করা হয়, যা ব্যাংকের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ। বর্তমানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগ (ঋণ) বিতরণের চেয়ে আদায়ের প্রতি অধিকতর মনোনিবেশ করছে। এ অবস্থায় শাখা ও জোনগুলোকে বিতরণ করা বিনিয়োগ যথাসময়ে আদায় ও খেলাপি বিনিয়োগ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা এবং সব জোন ও শাখায় বিনিয়োগ বা ঋণ সমভাবে বণ্টন নিশ্চিত করাসহ বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের ছেলে আহসানুল আলম ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আহসানুল আলম গত ১৯ জুন অনুষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৩২৪তম সভায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। ওই সভা থেকে সব ঋণ প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়। পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সম্প্রতি সব শাখা, জোনাল অফিস, উইং ও বিভাগীয় প্রধানকে চিঠি দিয়েছেন।
এতদিন ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন হতো জোনাল অফিস থেকে। আর যেসব শাখার প্রধান সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসারের (এসপিও) ওপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তা, সেসব শাখা থেকে ২০ লাখ পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারতেন। এসপিও পর্যন্ত পদমর্যাদার কর্মকর্তা শাখাপ্রধান হলে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করা যেত। প্রতি পর্যায়ে ঋণ যথাযথভাবে গেছে কিনা তা তদারকি করতো প্রধান কার্যালয়।
আইন অনুযায়ী, একটি ব্যাংকের ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৪ টাকা সিআরআর হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলতি হিসাবে রাখতে হয়। তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকে বিধিবদ্ধ তারল্য (সিআরআর) রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
গত জুন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের আমানত ছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। এর ৪ শতাংশ হারে অন্তত ৫ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা নগদে বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকার কথা। কিন্তু গত ২৯ জুলাই ব্যাংকটির চলতি হিসাবে ছিল মাত্র ৩০ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। এর আগে গত বছরের অক্টোবর শেষে ব্যাংকটির আমানত উঠেছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকায়।
শাখায় পাঠানো ইসলামী ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে বিভিন্ন স্কিম ও কৃষি ঋণের বাইরে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত যাবতীয় ঋণ অনুমোদন করবেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আর স্কিমের ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুমোদন করবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট শাখা, বিভাগ বা জোন। ঋণের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে অনুমোদন করবে পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটি। আবার যেকোনো অঙ্কের এলসি খোলার ক্ষেত্রে কেস টু কেস ভিত্তিতে প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। আর সব ধরনের এলসির ক্ষেত্রে ন্যূনতম শতভাগ মার্জিন নিতে হবে। অবশ্য ব্যাক টু ব্যাক এলসি, শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং সরকারি অগ্রাধিকার প্রকল্পের পণ্য আমদানিতে মার্জিনের শর্ত শিথিল করা যাবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মিজান উদ্দিন
Copyright © 2024 Topheadline. All rights reserved.