সাগরে মাছ ধরার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে রোববার (২৩ জুলাই) রাত ১২টায়। এতে লক্ষ্মীপুরের ৩০ হাজার জেলে নৌকা-জাল, পানি-খাবারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তত সাগরে যেতে। ওই জেলেদের মধ্যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। তারা এতদিন ধারদেনা করে পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটিয়েছেন। এখন সাগরে গিয়ে বিপুল ইলিশ মাছ পাবেন- এ আশায় বুক বেঁধেছেন তাঁরা।
এদিকে রামগতির আলেকজান্ডার ও রায়পুরের খাসেরহাটের সমুদ্রগামী ১২ জন জেলে জানিয়েছেন, সরকার তাদের খাদ্য সহায়তার ৮৬ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা। নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে, অথচ তাঁরা পুরো চাল পাননি। এ জেলে তালিকা নিয়ে অনিয়ম, কারসাজি রয়েছে। বরাদ্দ সহায়তাও পর্যাপ্ত নয়। এতে তাঁরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার মাছের উৎপাদন, সুষ্ঠু প্রজনন এবং মৎস্য সম্পদ সংরক্ষেণে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সামুদ্রিক জলসীমায় সব ধরণের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ ৬৫ দিন বেকার হয়ে পড়া সমুদ্রগামী জেলেদের ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুরের তালিকাভূক্ত ২০ হাজার ১৫ জন জেলে সাগরে গিয়ে মাছ ধরে। এরমধ্যে ১৭ হাজার ৮৬০ জন জেলে রামগতি উপজেলার। বাকিরা সদর, কমলনগর ও রায়পুর উপজেলার। ইতোমধ্যে তালিকাভূক্ত জেলেদের প্রথম দফায় ৫৬ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই বাকি চাল বিতরণ করা হবে। তবে বেসরকারি একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, লক্ষ্মীপুরে সমুদ্রগামী জেলের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার।
রায়পুর উপজেলার হাজীমারা এলাকার জেলে ইসমাইল মাঝি বলেন, সরকার যে চাল দেয়, তা দিয়ে কিছুই হয় না। এজন্য জেলেরা বাধ্য হয়েই প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিষেধাজ্ঞার সময় নদী-সমুদ্রে যায়। জেলে পুনর্বাসনে সরকারকে বাস্তবসম্মত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
কমলনগর লুধুয়া মাছঘাটের জমির হোসেন জানান, নদী-সমুদ্রে জালে আগের মতো মাছ ধরা পড়ে না। অনেকসময় জ্বালানি খরচও উঠে না। এজন্য তাঁরা মহাজনের পাশাপশি ধারদেনা এবং সমিতি থেকে টাকা নিচ্ছেন। সাগরে যেতে এখন নৌকা-জাল, পানি-খাবারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তত।
রামগতি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন বলেন, জেলেরা সমুদ্রে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা আছেন। তাঁদের মধ্যে আমেজ রয়েছে।
জাতীয় মৎস্যজীবি সমিতি রায়পুর উপজেলা শাখার সভাপতি মোস্তফা বেপারী বলেন, চরবংশীর নাইয়াপাড়ার অন্তত ৭০টি ট্রলার সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। প্রতিটিতে ১৫ থেকে ২০ জন মাঝি-জেলে থাকে। অথচ রায়পুরে শুধু ১৯৮ জন জেলে খাদ্য সহায়তা পায়। এতে জেলেদের কষ্টের শেষ নেই। বিষয়টি প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও কোন ফল আসেনি।
রামগতি উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, রামগতির অধিকাংশ জেলেই সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। এখন তাদের মধ্যে আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা সাগরে যাওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছেন।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, সমুদ্রগামী জেলেরা দীর্ঘদিন অলস ছিলেন। এখন পুরোদমে তারা সাগরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। খাদ্য সহায়তার দ্বিতীয় ভাগের চাল এখনও বিতরণ করা হয়নি। শীঘ্রই তা দেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ মিজান উদ্দিন
Copyright © 2024 Topheadline. All rights reserved.