কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে যে কেউ সহজেই বানিয়ে ফেলতে পারবেন ভার্চুয়াল উপস্থাপক। সেই সঙ্গে উপস্থাপকের ভয়েসে যুক্ত করে দিতে পারবেন পছন্দমতো কণ্ঠস্বর। যা বাস্তবের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যাবে। বর্তমান সময়ে এই প্রযুক্তি চলে এসেছে আমাদের হাতের একদম নিকটে। ভারতের ওড়িশা রাজ্যের ওটিভি চ্যানেলে খবর পড়েছিলেন এআই সংবাদ উপস্থাপক লিসা। স্থানীয় ভাষায় তিনি খবর পড়েন মিনিটখানেক। চ্যানেলটি তখন জানিয়েছিল, সম্প্রচার ও সাংবাদিকতার যুগে ‘বিপ্লব’ ঘটিয়েছে এই এআই সংবাদ উপস্থাপক। আঞ্চলিক পর্যায়ে তারাই প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংবাদ উপস্থাপককে আনতে পেরেছে বলে দাবি তাদের।
গত ১৯ জুলাই দেশে প্রথমবারের মতো এআই উপস্থাপক দিয়ে টিভি পর্দায় সংবাদ উপস্থাপনা করিয়েছে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম চ্যানেল টুয়েন্টিফোর। প্রযুক্তির এই উঠতি সময়ে এমনটি আহামরি কিছু নয়। অনলাইনে যে কেউ কয়েক মিনিটেই বানিয়ে ফেলতে পারবেন এমন ভার্চুয়াল উপস্থাপনার ভিডিও ক্লিপ। কোনো খরচ ছাড়াই হেইজেনস (heygen.com), ইলেভেনল্যাবস (elevenlabs.io) এমন বেশ কিছু এআই স্পোকস পারসন ক্রিয়েটর ওয়েবসাইট ও অ্যাপ রয়েছে, যেগুলো দিয়ে সংবাদ উপস্থাপনের পাশাপাশি যেকোনো ভিডিও ধারাভাষ্য দেওয়া সম্ভব। সেই সঙ্গে বাংলা, ইংরেজিসহ পছন্দের ভাষা, পুরুষ বা নারী কণ্ঠ নির্বাচণ করার সুবিধা তো রয়েছেই। চাইলে গ্যালারি থেকে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, বয়স ও চেহারার কয়েক শ’ ভার্চুয়াল সংবাদ উপস্থাপকের অবয়ব পছন্দমত বেছে নিতে পারেন আপনিও। এজন্য আপনাকে এসব অ্যাপসের ওপর ধারণা নিতে হবে এবং সেই ধারণা অনুযায়ী আপনার পছন্দমতো ভিডিও বানাতে পারবেন অনায়াসে।
কেউ যদি বাংলা হরফে স্ক্রিপ্ট লিখে দেন, তাহলে ভার্চুয়াল উপস্থাপক সেই স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী ঠোঁট নাড়িয়ে উপস্থাপনা করবেন। এই উপস্থাপনা বাস্তবসম্মত করাতে শব্দ উচ্চারণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অঙ্গভঙ্গিও করতে পারেন ভার্চুয়াল উপস্থাপককে। কেউ চাইলে নিজেদের পছন্দের চেহারার মতো করে বা কোনো ব্যক্তির চেহারার সঙ্গে মিল রেখেও ভার্চুয়াল সংবাদ উপস্থাপক বানিয়ে নিতে পারেন। তবে এআই অনলাইন সেবাদাতা প্ল্যাটফর্মে সাধারণ বা স্টক সুবিধার বাইরে ১ মিনিটের বেশি সময়ের ভিডিও এবং বাড়তি অনুষঙ্গ যোগ করতে হলে গুনতে হবে ডলার। ১ মিনিট সময়ব্যাপ্তির ভিডিও বিনা খরচেই যতো খুশি বানিয়ে নেওয়া যাবে। এর সঙ্গে আছে তিন শতাধিক ভয়েস প্যাটার্ন, ১২০টির বেশি মুখোয়ব ও পোশাক-পরিচ্ছদ ও চার শতাধিক ভিডিও টেমপ্লেট, যার সবগুলোই ফ্রি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই বলছেন, সামনের দিনগুলোতে এআই কর্মক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। আবার এর বিপরীত মতও আছে। কেউ কেউ বলছেন, এআইয়ের সুবাদে অনেক কাজই সহজ হয়ে গেছে, তাই বলে এখনই এসব এআইয়ের দখলে চলে যাবে—ব্যাপারটি এমন নয়। যেমন, মানুষ দিয়ে সংবাদ উপস্থাপনা যতোটা সাবলিল ও বাস্তবসম্মত হয়, এআই দিয়ে তেমনটি হয় না। সংবাদ পাঠ হচ্ছে একটি শিল্প, এই শিল্প খুব সহজেই আয়ত্ব করা যাবে বিষয়টি ঠিক এমন নয়। ফলে পাঠক বা দর্শকরা এখনই ব্যাপারটিকে স্বাভাবিকভাবে নেবেন—এমনটা নাও হতে পারে।