নাগরিকত্ব আইনের সংস্কারের ফলে জার্মান পাসপোর্ট পাওয়া আরো সহজ হয়েছে। তাই জার্মান পাসপোর্ট পেতে আবেদন করছেন অনেকেই। কেবল বার্লিনে জুন মাসে প্রায় চার হাজার আবেদন জমা পড়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১৩৩ জন আবেদেন করেছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একজন কর্মী এ তথ্য জানিয়েছেন। যদিও জুলাইয়ের কোনো পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি। তবে বার্লিন অফিসে তিন সপ্তাহে পাঁচ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে।
নতুন আইনটি ২৭ জুন থেকে কার্যকর হয়েছে। ২৭ জুন থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০টি আবেদন জমা পড়েছে বার্লিনের অফিসে। পরিসংখ্যান বলছে, হাজার হাজার মানুষ আবেদন করায় প্রক্রিয়া এখন আরো দীর্ঘতর হতে পারে।
জার্মানির ১৬টি রাজ্যের প্রতিটিতে ‘ন্যাচারালাইজেশন’ কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তারাই আবেদন প্রক্রিয়াকরণের বিষয়টি দেখেন। বার্লিন একটি থ্রি-সিটি স্টেট অর্থাৎ তিনটি বড় শহর বার্লিনের আওতায় রয়েছে।
বাভারিয়া রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জানুয়ারি থেকে মে মাসে গড়ে পাঁচ হাজার ৬০০টির বেশি আবেদন জমা পড়েছিল। জুন মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৪০০টিতে।
স্যাক্সনি রাজ্য বলেছে, ২০২৩ সালে প্রক্রিয়াকরণে সময় লাগতো তিন থেকে ১৮ মাস। তবে নতুন আইনের কারণে এ বছর তা আরো দীর্ঘ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
• নতুন আইন যেভাবে কাজ করে
এর আগে জার্মানিতে আট বছর থাকার পর বিদেশিরা জার্মান পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারতেন। তবে সমাজে একীভূত হওয়ার প্রমাণ সাপেক্ষে ছয় বছর থাকার পর নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারতেন বিদেশিরা। এখন সেটা কমিয়ে আনা হয়েছে পাঁচ বছরে। এমনকি আবেদনকারীরা যদি খুব দক্ষতার সঙ্গে জার্মান সমাজে একীভূত হতে পারার প্রমাণ দেখাতে পারেন, তাহলে তিন বছরেও নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। যদি আবেদনকারীরা বিশেষ ইন্টিগ্রেশন অর্জন দেখাতে পারেন, বিশেষ করে স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে ভাল পারফরম্যান্স বা নাগরিক জীবনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখার মতো কারণ দেখাতে পারেন তাহলে তিন বছরে নাগরিক হওয়া সম্ভব।
নাগরিকত্ব শুধু তাদেরই দেওয়া হবে, যারা নিজের পাশাপাশি তার ওপর নির্ভরশীলদেরও দায়িত্ব নিতে সক্ষম। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কল্যাণ ভাতা নেয়া ব্যক্তিরা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন না।
নতুন এই আইনের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দ্বৈত নাগরিকত্ব। নতুন জার্মান আইনে, বিদেশিরা নিজের দেশের নাগরিকত্ব ধরে রাখতে পারবেন। এর আগে, শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র এবং নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের নাগরিকরাই জার্মানিতে দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখতে পারতেন।
দ্বৈত নাগরিকত্ব দুই দেশের আইনের ওপর ভিত্তি করে প্রযোজ্য হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জার্মানির নাগরিকত্ব অর্জনের সময় কোনো শর্ত পূরণ ছাড়াই আবেদনকারী তার আগের নাগরিকত্ব রাখতে পারবেন। ফলে জার্মান পাসপোর্ট নেওয়ার সময় নিজের দেশের পাসপোর্ট ছাড়ার আক্ষেপ থাকবে না। তবে আবেদনকারীর নিজ দেশ দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখার সুযোগ দেয় কি না বা এ বিষয়ে জার্মান সরকারের সঙ্গে অন্য কোনো দেশের কোনো চুক্তি আছে কি না, বিষয়টি তার ওপরও নির্ভর করবে।
নাগরিকত্ব আইনের সংস্কারের ফলে নবজাতকদের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা হয়েছে। বাবা-মায়ের মধ্যে যে কোনো একজন টানা পাঁচ বছর জার্মানিতে বাস করলে জার্মানিতে জন্ম নেওয়া তাদের শিশু দেশের নাগরিকত্ব পাবে। এতদিন এই সময়সীমা ছিল আট বছর। ইনফোমাইগ্রেন্টস।